Addvertisement

ঠাকুরগাঁও জেলা: ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনীতি (সম্পূর্ণ পরিচিতি)

 ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস ও বিস্তারিত পরিচিতি:




📜 নামকরণের ইতিহাস:

ঠাকুরগাঁও নামটির উৎপত্তি সম্পর্কে কয়েকটি জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে। প্রধানত বিশ্বাস করা হয়, এক সময় এখানে “ঠাকুর” নামে এক ধনী জমিদারের বাস ছিল। তাঁর নামে এই স্থানের নামকরণ হয় ঠাকুরের গাঁও, যা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে ঠাকুরগাঁও হয়ে যায়।


🏰 প্রাচীন ইতিহাস:

প্রাচীন কালে ঠাকুরগাঁও অঞ্চলটি পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ ছিল, যা বর্তমানে রংপুর ও রাজশাহীর কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। তখন এটি মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন রাজবংশের অধীনে ছিল। এই অঞ্চলে বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীরও বসবাস ছিল, বিশেষ করে সাঁওতাল ও ওরাঁও জাতির।



👑 মধ্যযুগ ও জমিদারি শাসন:

মুঘল ও পরবর্তীকালে ব্রিটিশ আমলে ঠাকুরগাঁও ছিল দিনাজপুর জেলার অংশ।

ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে অনেক জমিদার ছিলেন, যারা প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন।  জমিদারদের রাজবাড়ি, দিঘি, মন্দির ও মসজিদের স্থাপত্য এখনো জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে।


পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭–১৯৭১):

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানের পূর্ব অংশে (বর্তমান বাংলাদেশ) যুক্ত হয়।

সে সময় এটি দিনাজপুর জেলার একটি মহকুমা (subdivision) ছিল।



মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭১ সালের ইতিহাস:

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

ঠাকুরগাঁওয়ে অনেক শহীদ ও গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল।

জেলার বিভিন্ন জায়গায় শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়েছে।



🏛 জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা:

ঠাকুরগাঁও পূর্বে দিনাজপুর জেলার একটি মহকুমা ছিল।

১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, এটি স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

তখনকার সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ নীতির আওতায় নতুন জেলা গঠন করেন, যার মধ্যে ঠাকুরগাঁও অন্যতম।


📍 ভৌগোলিক অবস্থান:

ঠাকুরগাঁও জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি সীমান্তবর্তী জেলা। এটি রংপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। জেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে দিনাজপুর ও পঞ্চগড়, পূর্বে পঞ্চগড় ও নীলফামারী এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।

🗺 প্রশাসনিক বিবরণ:

জেলার আয়তন: প্রায় ১৮০৯.৫২ বর্গ কিলোমিটার

উপজেলা সংখ্যা: ৫টি

1. ঠাকুরগাঁও সদর


2. বালিয়াডাঙ্গী


3. রানীশংকৈল


4. হরিপুর


5. পীরগঞ্জ


ইউনিয়নের সংখ্যা: ৫৩টি

পৌরসভা: ৩টি

গ্রামের সংখ্যা: প্রায় ৬৫০+


👥 জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী:

মোট জনসংখ্যা: প্রায় ১৫ লাখ (হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী)

ধর্ম: মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীও রয়েছে

আদিবাসী গোষ্ঠী: সাঁওতাল, ওরাও, মুণ্ডা ইত্যাদি কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বাস করে


🌾 অর্থনীতি ও কৃষি:

ঠাকুরগাঁও জেলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি কৃষি। এখানে ধান, গম, ভুট্টা, আলু, আখ এবং বিভিন্ন শাকসবজি উৎপন্ন হয়।
বিশেষ করে আখ চাষ ও চিনি শিল্প (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন - ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস) জেলার পরিচিতি বহন করে।

🏭 শিল্প ও কারখানা:

ঠাকুরগাঁও সুগার মিল

হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প

কাঠ ও বাঁশ শিল্প

🚌 যোগাযোগ ব্যবস্থা:

সড়ক পথে ঠাকুরগাঁও জেলা রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে ভালোভাবে যুক্ত।

রেলপথ রয়েছে দিনাজপুর হয়ে।


🏞 দর্শনীয় স্থান:

রানীপুর রাজবাড়ী

বালিয়াডাঙ্গী জমিদার বাড়ি

সিংগা ডিঘি

ঠাকুরগাঁও টাউন হল

পীরগঞ্জের ঐতিহাসিক মসজিদ

সীমান্তবর্তী গ্রামসমূহের প্রাকৃতিক দৃশ্য


🏫 শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ

ঠাকুরগাঁও মহিলা কলেজ

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়

সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ


🔖 বিশেষ বৈশিষ্ট্য:

ঠাকুরগাঁও জেলার মানুষ অতিথিপরায়ণ ও পরিশ্রমী।

এই জেলাটি শান্তিপূর্ণ এবং সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ।






Post a Comment

0 Comments